বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার একটি বড় প্রমাণ হলো, এখন গ্রীষ্মকালে অনেক বেশি গরম পড়ে, এমনকি মাঝে মাঝে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা ৪৭° সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায় যেটি আগে কখনো হয়নি। তাপমাত্রার উপাত্ত থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল- দুই সময়েই তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেশি থাকে। অর্থাৎ বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মিঠা পানিতে এর প্রভাব কী হবে? তোমরা আগেই জেনেছ যে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীতে সঞ্চিত বরফ গলতে শুরু করবে এবং সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। এর প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি তীব্র হবে, যার কারণে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে আমাদের দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অংশ পানির নিচে চলে যাবে। সাগরের লবণাক্ত পানি মূল ভূখন্ডে ঢোকার কারণে নদ-নদী, খাল-বিল আর ভূগর্ভের পানি লবণাক্ত হয়ে যাবে। যার ফলে দেশে মিঠা পানি বলতে আর কিছু থাকবে না। তোমরা হয়তো জান যে, সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় চিংড়ি চাষের জন্য নালা কেটে লবণার পানি মূল ভূখণ্ডে আনা হয়। এ কারণে ঐ সকল এলাকার ভূগর্ভের পানিসহ মিঠা পানির অন্যান্য উৎসও লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে খাওয়ার এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার উপযোগী পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বলতে গেলে ঐ সকল এলাকার মিঠা পানির একমাত্র উৎস এখন বৃষ্টির পানি। এমনও দেখা গেছে যে প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ সবাই মিলে একটি পুকুরে বৃষ্টির পানি ধরে রাখে এবং সারা বছর সেই পানি ব্যবহার করছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পানি আনার জন্য গৃহবধূদের অনেক সমর ৭-৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পুকুরে ধরে রাখা পানি আনতে হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে প্রায় পুরো বাংলাদেশেই এ অবস্থা হতে পারে।ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশের অংশ বিশেষ (যেমন: মালদ্বীপ, ভারতের কিছু অংশ) বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানির নিচে ডুবে গেছে এবং ঐ সকল দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ “জলবায়ু শরণার্থীতে” পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে গিয়ে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ আর গতিপথও পাল্টে যেতে পারে, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
Read more